সীতারামদাস ওমকারনাথ
দুর্গানামের ফল ——-
মা তোর দুর্গানামের মহিমা বল।
শিব বলেছেন—
অষ্টোত্তরসহস্রস্তু যো জপেদ্ ভক্তিমান্ নরঃ।
প্রত্যহং পরমেশানি তস্য পুণ্যফলং শৃণু॥
ধনার্থী ধনমাপ্নোতি জ্ঞানার্থী জ্ঞানমেব চ।
রোগাৰ্ত্তো মুচ্যতে রোগাৎ পাপামুচ্যেত পাতকী॥ পুত্ৰাৰ্থী-পুত্রমাপ্নোতি দেবি সত্যং ন সংশয়ঃ।
অযুতং যো জপেদ্ ভক্ত্যা প্রত্যহং পরমেশ্বরী॥ নিগ্রহানুগ্রহে শক্তঃ স ভবেৎ কল্পপাদপঃ।
তস্য ক্রোধাদ্ ভবেন্মৃত্যুঃ প্রসাদে পরিপূর্ণতা।
এবঞ্চ তং বিজানীয়াৎ সমর্থং সৰ্ব্বকৰ্ম্মণি॥ —জামল
—যে ভক্তিমান, মানব অষ্টোত্তর সহস্র দুর্গানাম প্রত্যহ জপ করে তার পূণ্যফল শ্রবণ কর, সে যদি ধনকামী হয় তাহলে ধনলাভ করে, জ্ঞানার্থী অর্থাৎ “অহং ব্রহ্মাস্মি” এই জ্ঞানলাভেচ্ছু, ব্রহ্মজ্ঞানে দৃঢ়স্থিতি লাভ করে থাকে। রোগপীড়িত রোগ হতে মুক্ত হয়, পাতকী ব্যক্তি নিত্য হাজার আট দুর্গানাম জপ করলে পাপ হতে মুক্ত হয়ে যায়। যদি কোন অপুত্রক ব্যক্তি পুত্রলাভের কামনায় নিত্য অষ্টোত্তর সহস্র দুর্গানাম জপ করে তাহলে সে পুত্র লাভ করে। হে দেবি! ইহা সত্য এতে কোন সংশয় নাই।
রোজ হাজার আট দুর্গানাম জপ করলে ধনার্থী ধন, জ্ঞানার্থী জ্ঞানলাভ করে, রোগী রোগ হতে, পাপী পাপ থেকে মুক্ত হয়, পুত্রকামী পুত্র লাভ করে— পাগলা বাবার এ’কথা বিশ্বাস করবো বলে মনে করছি, কিন্তু মন কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না।
শিববাক্য কখনও মিথ্যা হতে পারে না, পারে না, পারে না। ইচ্ছা হয় তুই পরীক্ষা করে দেখতে পারিস্। যে ব্যক্তি যে কামনা করে দুর্গানাম জপ করবে তার সে কামনা পূর্ণ হবেই।
কতদিনে হবে?
তার কোন স্থির নাই। সে যদি অত্যন্ত পাপী হয় দুর্গানাম জপ করতে করতে আগে পাপ দূর হবে তারপর সে তার বাঞ্ছিত ফল লাভ করবেই। তবে ভক্তি সহকারে জপ করতে হবে।
যে মানব ভক্তিভাবে প্রত্যহ অযুত দুর্গানাম জপ করে সে কল্পতরু হয়। সে নিগ্রহ অনুগ্রহ করবার শক্তিলাভ করে। তার ক্রোধে মত্যু হয় এবং প্রসন্নতায় পরিপূর্ণতা লাভ হয়ে থাকে। এইরূপ তাকে সমস্ত কৰ্ম্মে সমর্থ জানবে।
মাত্র দুর্গানাম জপ করলে এরকম শক্তিলাভ হবে?
নিশ্চয়ই হবে। তুই জপ করে দেখ্, প্রত্যহ দশ সহস্র দুর্গানাম জপ কর, তুই অসাধ্য সাধনে সমর্থ হবি। -শোন
মাসি মাসি চ যো লক্ষং অপং কুর্য্যাদ্ বরাননে।
ন তস্য গ্রহপীড়া স্যান্নাপি বন্ধুবিয়োজনম্ ।
ন চৈশ্বর্য্যং ক্ষয়ং যাতি ন চ সর্পক্ষতং ক্কচিৎ।।
নাগ্নি-চৌর ভয়ন্বাপি ন চারণ্যে জলে ভয়ম্।
পর্ব্বতারোহণে দেবী সিংহ-ব্যাঘ্রভয়াদিকে॥
ভূত-প্রেত-পিশাচানাং ভয়ং বা কুত্রচিৎ ভবেৎ।
ন চ বৈরিভয়ং কান্তে ন চ দস্যুভয়ং পথি॥
জ্বরাদীনাঞ্চ রোগাণাং ন শরীরে স্হিতিঃ ক্কচিৎ। পরলোকে ভবেৎ স্বর্গী কথিতং বীরবন্দিতে।।
চন্দ্রসূর্য্যসমো ভূত্বা বসেৎ কল্পাযুতং দিবি।
বাজপেয় সহস্রস্য যৎ ফলং স্যাদ্ বরাননে। —জামল
হে সুন্দরবদনে! মাসে মাসে যে ভক্ত লক্ষ দুর্গানাম জপ করে, তার গ্রহপীড়া, বন্ধুবিয়োগ হ্য় না, অক্ষয় ঐশ্বর্য্য থাকে, কখনও সর্পে তাকে দংশন করে না, অগ্নিভয়, চোরভয়, জলে অরণ্যে ভয়, পৰ্ব্বত আরোহণে সিংহ ব্যাঘ্র প্রভৃতি ভয়, কোন স্থলে ভূত প্রেত পিশাচাদির ভীতি হয় না, শত্রুভয়, পথে দস্যুভয় হয় না। তার শরীরে জ্বরাদি রোগ থাকতে পারে না। ইহলোকে পরম সুখভোগ করে দেহান্তে স্বর্গে গমন ক’রে, চন্দ্র সূর্যের ন্যায় অযুতকল্প কাল স্বর্গে বাস করে।
কল্প কাকে বলে মা?
মানুষের একবৎসরে দেবগণের একদিন, দেবপরিমিত দ্বিসহস্র যুগে ব্রহ্মার একদিন, ব্রহ্মার দিনরাত্রিতে মানবের দু’কল্প, দিন উদয়কল্প, রাত্রি ক্ষয়কল্প। চার সহস্র সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলিযুগে ব্রহ্মার একদিন হয়, তার নাম কল্প। এরূপে অযুত কল্প স্বর্গে বাস করে থাকে। প্রত্যহ দুর্গানাম জপ করলে সহস্র বাজপেয় যজ্ঞের যে ফল সেই ফল লাভ হয়ে থাকে।
মা মা! তোর দুর্গানাম জপের অপূর্ব্ব মহিমা শুনে প্রাণ ভরে গেল! ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে লোকের দ্বারে দ্বারে বলি—ওরে পাপী তাপী দীন দুঃখী রোগী শোকী দরিদ্র অজ্ঞানী! তোরা দুর্গানাম জপ কর, তোদের আর কিছু করতে হবে না, কেবলমাত্র দুর্গানাম জপ করলে পাপ তাপ দুঃখ দৈন্য রোগ শোক অভাব অজ্ঞান কিছু থাকবে না, তোরা আনন্দের মহা পারাবারে ডুবে যাবি, যা চাবি তাই পাবি।
কি আনন্দ-সংবাদ শঙ্কর দিয়েছেন! মাত্র দুর্গানাম জপ, অন্য কোন কঠোর সাধনা করতে হবে না, কেবল দুর্গা দুর্গা দুর্গা এভাবে দুর্গানাম জপ করলে সর্ব্বার্থ সিদ্ধ হবে৷ দে মা শক্তি দে! তোর দুর্গানাম জপের শক্তি দে।
যা যা তুই যা! উচ্চ কণ্ঠে জগতে প্রচার কর—ওরে কলিহত রোগ শোক পাপ তাপ দুঃখ দৈন্যের ক্রীড়াপুত্তলী নরনারী! তোরা কেবল দুর্গানাম জপ কর, যা চাবি তাই পাবি। মহা উৎপাত, মহারোগ, মহাশোক, মহাবিপদ, সঙ্কট, মহাদুঃখ সব দূর হয়ে যাবে। তোরা পরম আনন্দসাগরে ডুবে যাবি, বেশী কি তোরা শিবত্ব প্রাপ্ত হবি।
Leave a Reply