জয় জগন্নাথ

Received from Internet

জগন্নাথ প্রকরণ –
যে ভক্ত যে ভাব নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হন, তিনি সেই ভাবেই তার কাছে ধরা দেন। শবরদের কাছে তিনি আদিবাসী দেবতা উয়িঙসাং বা কিটুং বা জগনাইলো অথবা জগবোই, জৈনদের কাছে তিনি ঋষভদেব, বৌদ্ধদের কাছে তিনি আদিবুদ্ধ, বৈষ্ণবরা তাকে জানেন শ্রীপতিরূপে, শৈবদের তিনি ভৈরব, শাক্তদের কাছে তিনি মহাকালী, আবার শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর মধ্যে শ্রীকৃষ্ণকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে –
“যং শৈবাঃ সমুপাসতে শিবেতি, ব্রহ্মেতি বেদান্তিনঃ,
বৌদ্ধাঃ বুদ্ধেতি, প্রমাণপতয়ঃ কর্তেতি নৈয়ায়িকাঃ।
অর্হন্নিত্যং জৈনশাসনরতাঃ, কর্মেতি মীমাংসকাঃ,
সোঽয়ং বো বিদধাতু বাঞ্ছিতফলং ত্রৈলোক্যনাথোহরিঃ।।”

● ধ্যান :~
“নীলাদ্রৌ শঙ্খমধ্যে শতদলকমলে রত্নসিংহাসনস্থং
সর্বালঙ্কারযুক্তং নবঘনরুচিরং সংযুক্তং চাগ্রজেন।
ভদ্রায়া বামভাগে রথচরণযুতং ব্রহ্মরুদ্রেন্দ্রবন্দ্যং
বেদানাং সারমীশং স্বজনপরিবৃতং ব্রহ্মদারুং স্মরামি৷৷”
■ অনুবাদ – যিনি নীলাচলে শঙ্খক্ষেত্রে শতদলকমলে রত্নবেদীতে সর্বালঙ্কার পরিহিত নবনীরদবর্ণ, যিনি অগ্রজ বলভদ্র ও সুভদ্রার বামপার্শ্বে স্থিত, যিনি চলমান রথে ব্রহ্মা রুদ্র ও ইন্দ্রাদি দ্বারা বন্দিত, সেই আত্মগণপরিবৃত সারভূত বেদমূর্তি ব্রহ্মদারুরূপী পরমেশ্বরকে স্মরণ করি।

● সর্বদেবদেবীরূপ জগন্নাথের ধ্যানান্তর :~
“যং দারুব্রহ্মমূর্তিং প্রণবতনুবরং সর্ববেদান্তসারং
ভক্তানাং কল্পবৃক্ষং ভবজলতরণী সর্বতমুখামুখম্।
যোগীনাং হংসতত্ত্বং হরিহরনমিতং শ্রীপতিবৈষ্ণবানাং
শৈবানাং ভৈরবাস্যাং পশুপতিপরমং শাক্ততত্ত্বে শক্তিঞ্চ।
বৌদ্ধানাং বুদ্ধসাক্ষাৎরূপ ভয়ার্তিহরং জৈনসিদ্ধান্তমূর্তিঃ
ত্বং দেবো পাতু নিত্যং কলিকলুষহরং নীলশিলাধিনাথঃ।।”

● পূজার মন্ত্র :~
প্রভাতে (বালগোপালরূপী) – ‘ॐ গোপালায় স্বাহা।।’
মধ্যাহ্নে (গোপীনাথ গোবিন্দরূপী) – ‘ॐ গোপীজনবল্লভায় স্বাহা।।’
সায়াহ্নে (পরমেশ্বর নারায়ণরূপী) – ‘ॐ কৃষ্ণায় গোবিন্দায় গোপীজনবল্লভায় স্বাহা।।’
[সব ক্ষেত্রেই কৃষ্ণবীজ সংযুক্ত করতে হবে]

● প্রার্থনা :~
“রত্নাকরস্তব গৃহং গৃহিণী চ পদ্মা কিং দেয়মস্তি ভবতে পুরুষোত্তমায়।
আভীর বামানয়নাহৃতমানসায় দত্তং মনো যদুপতে ত্বরিতং গৃহাণ।।”
■ অনুবাদ – যাঁর গৃহ রত্নালয় সমুদ্রে, গৃহিণী স্বয়ং লক্ষ্মী, সেই পুরুষোত্তম তোমাকে দেবার মতো কোন মহার্ঘ্য বস্তু আমার নেই। তোমার অভাব শুধু মনের, কারণ গোপরমণীর নয়ন কটাক্ষে তোমার মনটি অপহৃত হয়েছে, এখন দয়া করে হে যদুপতি তুমি ত্বরিত আমার মনটি গ্রহণ করো।

● প্রণাম :~
“নীলাচলনিবাসায় নিত্যায় পরমাত্মনে।
বলভদ্র সুভদ্রাভ্যাং জগন্নাথায় তে নমঃ।।”
■ অনুবাদ – নিত্য পরমাত্মরূপ বলভদ্র ও সুভদ্রা সহিত নীলাচলনিবাসী জগন্নাথকে প্রণাম করি।

জগন্নাথ স্তোত্রম –

শ্ৰীজগন্নাথায় নমঃ!

কদাচিৎ কালিন্দীতট-বিপিন-সঙ্গীতক-রবো

মুদাভীরীনারী বদনকমলাস্বাদ-মধুপঃ।

রমাশম্ভুব্ৰহ্মাসুরপতিগণেশার্চ্চিতপদো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥১॥

ভুজে সব্যে বেণুং শিরসি শিখিপিচ্ছং কটিতট

দুকূলং নেত্ৰান্তে সহচর-কটাক্ষং বিদধতে।

সদা শ্ৰীমদ্বৃন্দাবন বসতি লীলা পরিচয়ো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥২॥

মহাম্ভোধেস্তীরে কনকরুচিরে নীলশিখরে

বসন্‌ প্রাসাদান্তে সহজবলভদ্ৰেণ বলিনা।

সুভদ্ৰামধ্যস্থঃ সকলসুরসেবাবসরদো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৩॥

কৃপাপারাবারঃ সজলজলদশ্রেণিরুচিরো

রমাবাণী রামঃ স্ফুরদমলপদ্মেক্ষণমুখৈঃ।

সুরেন্দ্রৈরারাধ্যঃ শ্রুতিগণ শিখাগীতচরিতো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৪॥

রথারূঢ়া গচ্ছন পথিমিলিত ভূদেবপটলৈঃ

স্তুতি প্ৰাদুৰ্ভাবং প্রতিপদমুপাকর্ণ্য সদয়ঃ।

দয়াসিন্ধুর্বন্ধু সকলজগতাংসিন্ধুসদয়ো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৫॥

পরব্রহ্মাপীড়্যং কুবলয়দলোৎফুল্ল নয়নো

নিবাসী নীলাদ্রৌ নিহিতচরণোহনন্ত শিরসি।

রসানন্দো রাধাসরসবপুরালিঙ্গন সুখো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৬॥

ন বৈ যাচে রাজ্যং ন চ কণকমাণীক্যবিভবং

ন যাচেহহং রম্যাং সকলজনকাম্যাং বরবধূম্‌।

সদা কালে কালে প্ৰমথপতিনা গীতচরিতে

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৭॥

হর ত্বং সংসারং দ্রুততরমসারিং সুরপতে

হর ত্বং পাপানাং বিততিমপরাং যাদবপতে।

অহো! দীননাথং নিহিতমচলং নিশ্চিতপদং

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৮॥

জগন্নাথাষ্টিকং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্ৰযতঃ শুচিঃ

সৰ্ব্বপাপ বিশুদ্ধাত্মা বিষ্ণুলোকং সগচ্ছতি॥৯॥

বাংলা অনুবাদ:

যিনি এক সময়ে কালিন্দী তটবৰ্ত্তী বিপিন মধ্যে সঙ্গীত শ্ৰবণে চঞ্চল হইয়া প্রীতিভরে ভৃঙ্গের ন্যায় গোপাঙ্গণাগণের বদনকমল আস্বাদন করিয়াছিলেন; লক্ষ্মী, শিব, ব্ৰহ্মা, ইন্দ্র ও গণেশ যাহার পদযুগল অৰ্চনা করেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথবৰ্ত্তী হউন॥ 1)

যিনি বামভুজে বেণু, মস্তকে ময়ুরপিচ্ছ এবং কটিতটে পীতাম্বর ও নয়ন প্ৰান্তে সহচরী গোপালাদিগের প্রতি কটাক্ষপাত করিয়া সদা বৃন্দাবন ধামে বাস ও লীলা করিতে প্ৰবৃত্ত আছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার দৃষ্টি পথগামী হউন॥ 2)

যিনি মহাসমুদ্রের তীরদেশে, কনকোজ্জল নীলাদ্রির শিখরে প্রাসাদাভ্যন্তরে বলশালী বলরাম ও সুভদ্রার মধ্যভাগে বাস করিতেছেন, যিনি সমস্ত দেবগণকে সেবা করার নিমিত্ত অবসর প্রদান করিতেছেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ দেব আমার নয়ন পথবৰ্ত্তী হউন॥ 3)

যিনি কৃপাসিন্ধু তুল্য, যিনি সজল-জলধারা-রুচির কান্তি, লক্ষ্মীসরস্বতী যাহার বামভাগে অবস্থিত, যাহার মুখমণ্ডল অমল কমলবৎ শোভমান, দেবেন্দ্ৰগণ যাঁহাকে আরাধনা করিয়া থাকেন, শ্রুতি সমূহ যাহার চরিত্র গান করেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ দেব আমার নয়নপথগামী হউন॥ 4)

রথে আরোহণ করিয়া গমন করিলে পথিমধ্যে ব্ৰাহ্মণগণ মিলিত হইয়া যাহার স্তব করিয়া থাকেন, যিনি তাদৃশ স্তব শ্রবণে পদে পদে প্ৰসন্ন হয়েন, সেই দয়াসিন্ধু, সকল জগতের বন্ধু, সমুদ্রের প্রতি সদয় হইয়া তত্তীরবাসী সেই জগন্নাথ স্বামী আমার নয়ন পথগামী হউন॥ 5)

নিরাকার পরব্রহ্ম স্তবনীয় হইলেও সাকার অবস্থায় যাঁহার নেত্র কুবলয়দলের ন্যায় প্ৰফুল্ল যিনি নীলাদ্রির উপরে অনন্তের শিরে পদার্পণ করিয়া বাস করতঃ শ্ৰীরাধিকার রসময় দেহ আলিঙ্গনে সুখী, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়নপথগামী হউন আমি রাজ্য চাহি না, স্বর্ণ মাণীক্যাদি বিভবও প্রার্থনা করি না এবং সকল লোক কমনীয়া মনোহারিণী কামিনীও চাই না, আমি সর্ব্বদা একান্ত মনে প্রার্থনা করি যেন ভূতনাথ যাঁহার চরিত্র কীৰ্ত্তন করেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়নপথগামী হয়েন॥ 7)

হে সুরপতে! তুমি আমার এই অসার সংসার হরণ কর, হে যাদব পতে! তুমি আমার অশেষ পাপভার ও হরণ কর। যিনি দীন ও অনাথ জনে নিশ্চয় চরণ সমৰ্পণ করেন, সেই এই প্ৰভু জগন্নাথ দেব আমার নয়নপথগামী হউন ৷৷ 8)

যে ব্যক্তি শুচি হইয়া, এই জগন্নাথাষ্টক পাঠ করে, সে ব্যক্তি সৰ্ব্ব পাপ হইতে বিশুদ্ধ হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করিয়া থাকে॥

Leave a Reply

Discover more from LAWET

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading