Jayatu Devi Durga(From Haribangsa Puran)

Durgalok nibasini Srimad Durgatinashini facebook page

ঋষি বৈশম্পায়ন বললেন; হে জনমেজয় ! যখন কৃষ্ণর পৌত্র অনিরুদ্ধ উষার সাথে বাণাসুরের পুরীতে বন্দি হলেন। তখন অনিরুদ্ধ নিজের রক্ষার্থে দেবী কোটবতীর (আর্যা বা দুর্গা ) শরণাপন্ন হলেন। সেই সময় অনিরুদ্ধ যে স্তুতির গায়ন করেছিলেন সেটি শুনুন। অনন্ত, অক্ষয়, দিব্য, আদিদেব, সনাতন জগদীশ্বর নারায়ণকে প্রণাম করে, সমস্তলোক নমস্কৃত এবং বরদানকারিণী, চণ্ডী, কাত্যায়নী ও দেবীমায়া নামে খ্যাতা যে দেবী আছে তার শ্রীহরির দ্বারা স্তুত নামসমূহের দ্বারা কীর্তন করবো। ঋষি এবং দেবতারা বাণীরূপ কুসুমের দ্বারা সেই শুভকারিনীর অর্চনা করেছেন, তিনি সবার শরীরেই বিদ্যমানা আছেন এবং তিনি সর্বদেবতার দ্বারা নমস্কৃত হন। আর্যাস্তুতি (অনুবাদ সমেত) অনিরুদ্ধ উবাচ

মহেন্দ্রবিষ্ণুভগিনীং নমস্যামি হিতায় বৈ।
মনসা ভাবশুদ্ধেন শুচিঃ স্তোষ্যে কৃতাঞ্জলিঃ॥ ৬
গৌতমীং কংসভয়দাং যশোদানন্দবর্দ্ধিনীম্ ।
মেধ্যাং গোকুলসম্ভূতাং নন্দগোপস্য নন্দিনীম্॥ ৭
প্রাজ্ঞাং দক্ষাং শিবাং সৌম্যাং দনুপুত্রবিমর্দিনীম্।
তাং দেবীং সর্বদেহস্থাং সর্বভূতনমস্কৃতাম্॥ ৮
দর্শনীং পূরণীং মায়াং বহ্নিসূর্যশশীপ্রভাং।
শান্তিং ধ্রুবাং চ জননীং মোহিনীং শোষিনীং তথা॥ ৯
সেব্যাং দেবৈঃ সর্ষিগণৈঃ সর্বদেবনমস্কৃতাম্।
কালীং কাত্যায়নীং দেবীং ভয়দাং ভয়নাশিনীম্॥ ১০
কালরাত্রিং কামগমাং ত্রিনেত্রাং ব্রহ্মচারিণীম্।
সৌদামিনীং মেঘরবাং বেতালীং বিপুলাননাম্॥ ১১
যূথস্যাদ্যাং মহাভাগাং শকুনিং রেবতীং তথা।
তিথিনাং পঞ্চমীং ষষ্ঠীং পূর্ণমাসীং চতুর্দশীম্॥ ১২
সপ্তবিংশতিঋক্ষাণি নদ্যাঃ সর্বা দিশো দশ।
নগরোপবনোদ্যানদ্বারাট্টালকবাসিনীম্ ॥ ১৩
হ্রীং শ্রীং গঙ্গাং চ গন্ধর্বাং যোগিনীং যোগদাং সতাম্।
কীর্তিমাশাং দিশং স্পর্শাং নমস্যামি সরস্বতীম্॥ ১৪
বেদানাং মাতরং চৈব সাবিত্রীং ভক্তবৎসলাম্।
তপস্বিনীং শান্তিকরীমেকানংশাং সনাতনীম্॥ ১৫
কৌটীর্যাং মদিরাং চণ্ডামিলাং মলয়বাসিনীম্।
ভূতধাত্রীং ভয়করীং কূষ্মাণ্ডীং কুসুমপ্রিয়াম্॥ ১৬
দারুণীং মদিরাবাসাং বিন্ধ্যকৈলাসবাসিনীম্।
বরাঙ্গনাং সিংহরথীং বহুরূপাং বৃষধ্বজাম্॥ ১৭
দুর্লভাং দুর্জয়াং দুর্গাং নিশুম্ভভয়দর্শিনীম্।
সুরপ্রিয়াং সুরাং দেবীং বজ্রপাণ্যনুজাং শিবাম্॥ ১৮
কিরাতীং চীরবসনাং চৌরসেনানমস্কৃতাম্।
আজ্যপাং সোমপাং সৌম্যাং সর্বপর্বতবাসিনীম্॥ ১৯
নিশুম্ভশুম্ভমথনীং গজকুম্ভোপমস্তনীম্।
জননীং সিদ্ধসেনস্য সিদ্ধচারণসেবিতাম্॥ ২০
চরাং কুমারপ্রভবাং পার্বতীং পর্বতাত্মজাম।
পঞ্চাশদ্দেবকন্যানাং পত্ন্যো ​ দেবগণস্য চ॥ ২১
কদ্রুপুত্রসহস্রস্য পুত্রপৌত্রবরস্ত্রীয়ঃ।
মাতা পিতা জগন্মান্যা দিবি দেবাপ্সরোগণৈঃ॥ ২২
ঋষিপত্নীগণানাং চ যক্ষগন্ধর্বযোষিতাম্।
বিদ্যাধরাণাং নারীষু সাধ্বীষু মনুজাষু চ॥ ২৩
এবমেতাষু নারীষু সর্বভূতাশ্রয়া হ্যসি।
নমস্কৃতাসি ত্রৈলোক্যে কিন্নরোদ্গীতসেবিতে॥ ২৪
অচিন্ত্যা হ্যপ্রমেযাসি যাসি সাসি নমোঽস্তু তে।
এভির্নামভিরন্যৈশ্চ কীর্তিতা হ্যসি গৌতমী॥ ২৫
ত্বৎপ্রসাদাদবিঘ্নেন ক্ষিপ্র ​মুচ্যে ​​ বন্ধনাৎ।
অবেক্ষস্ব বিশালাক্ষী পাদৌ তে শরণং ব্রজে॥ ২৬
সর্বেষামেব বন্ধানাং মোক্ষণাং কর্তুমর্হসি।
ব্রহ্মা বিষ্ণুশ্চ রুদ্রশ্চ চন্দ্রসূর্যাগ্নিমারুতাঃ॥ ২৭
অশ্বিনৌ বসবশ্চৈব বিশ্বেসাধ্বাস্তথৈব চ।
মারুতা সহ পর্জন্যো ধাতা ভূমির্দিশো দশ॥ ২৮
গাবো নক্ষত্রবংশাশ্চ গ্রহা নদ্যো হৃদাস্তথা।
সরিতঃ সাগরাশ্চৈব নানাবিদ্যাধরোরগাঃ॥ ২৯
তথা নাগাঃ সুপর্বাণো গন্ধর্বাপ্সরসাং
গণাঃ।
কৃৎস্নং জগদিদং প্রোক্তং দেব্যা নামানুকীর্তনাৎ॥ ৩০
দেব্যাঃ স্তবমিমং পুণ্যং যঃ পঠেৎ সুসমাহিতঃ।
সা তস্মৈ সপ্তমে মাসি বরমগ্র্যং প্রযচ্ছতি॥ ৩১
অষ্টাদশভূজা দেবী দিব্যাভরণভূষিতা।
হারশোভিতসর্বাঙ্গী মুকুটোজ্জ্বলভূষণা॥ ৩২
কাত্যায়নী স্তুয়সে ত্বং বরমগ্র্যং প্রযচ্ছতি।
অতঃ স্তবীমি ত্বাং দেবীং বরদে বামলোচনে॥ ৩৩
নমোঽস্তু তে মহাদেবী সুপ্রীতা মে সদা ভব।
প্রযচ্ছ ত্বং বরং হ্যায়ুঃ পুষ্টিং চৈব ক্ষমাং ধৃতিম্॥ ৩৪
বন্ধনস্থো বিমুচ্যেযং সত্যমেতদ্ ভবেদিতি।

নমোঽস্তু তে দেবী বরপ্রদে শিবে
নমোঽস্তু তে দেবী সুরারিনাশিনী॥ ৪২
নমোঽস্তু তে কামচরে সদাশিবে
নমোঽস্তু তে সর্বহিতৈষিণী প্রিয়ে।
নমোঽস্তু তে ভীতিকরি দ্বিষাং সদা
নমোঽস্তু তে বন্ধনমোক্ষকারীণি॥ ৪৩
ব্রহ্মাণীন্দ্রাণী রুদ্রাণী ভূতভব্যভবে শিবে।
ত্রাহি মাং সর্বভীতিভ্যো নারায়ণী নমোঽস্তু তে॥ ৪৪
নমোঽস্তু তে জগন্নাথে প্রিয়ে দান্তে মহাব্রতে।
ভক্তিপ্রিয়ে জগন্মাতঃ শৈলপুত্রী বসুন্ধরে॥ ৪৫
ত্রাহি মাং ত্বং বিশালাক্ষী নারায়ণী নমোঽস্তু তে।
ত্রায়স্ব সর্বদুঃখেভ্যো দানবানাং ভয়ঙ্করী॥ ৪৬
রুদ্রপ্রিয়ে মহাভাগে ভক্তানামার্তিনাশিনী।
নমামী শিরসা দেবীং বন্ধনস্থো ​ বিমোক্ষিতঃ॥ ৪৭ ফলশ্রুতি

আর্যাস্তবমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ সুসমাহিতঃ।
সর্বপাপবিনির্মুক্ত বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি ।
বন্ধনস্থো বিমুচ্যেত সত্যং ব্যাসবচো যথা ॥ ৪৮

শ্রীমহাভারতে খিলভাগে হরিবংশে পুরাণে বিষ্ণুপর্বণি অনিরুদ্ধকৃত আর্যাস্তুতি সম্পূর্ণম

অর্থাৎ- কৃষ্ণ পৌত্র অনিরুদ্ধ বললো, যে ইন্দ্র এবং বিষ্ণু ভগিনী তাকে আমার হিতকামনায় প্রণাম করছি, পবিত্র হয়ে ভাবশুদ্ধ মনে হাতজোড় করে তোমার স্তুতি করছি; দেবী তুমি গৌতমী (গোদাবরী), তুমি কংসকে (শ্রীকৃষ্ণের মামা) ভয়দায়িনী, যশোদার আনন্দ বর্ধনকারিনী, তুমি মেধা (বুদ্ধি), তুমি গোকুলে আবির্ভূতা তথা নন্দনামক গোপের নন্দিনী; হে দেবী তোমাকে প্রণাম।
দেবী তুমি জ্ঞানী, তুমি পারদর্শী, তুমি শিবা (কল্যাণস্বরূপা ও শিবপত্নী), তুমি সৌম্যা (শান্ত ও সুন্দর), তুমি দনুর (দানবদের জননী) পুত্রের (দানব) মর্দনকারিনী, তুমি সবার শরীরেই বিদ্যমান পরমচৈতন্য জ্যোতিস্বরুপা তথা সর্বভূত (সমস্ত প্রাণী) দ্বারা নমস্কৃত; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি দৃষ্টিশক্তি, তুমি অভিলাষার পুরণকারিনী, তুমি মায়া (অবিদ্যা; যেটি সংসারে আবদ্ধ জীবের বন্ধনের মূল কারণ), তুমি অগ্নি, চন্দ্র তথা সূর্য সমপ্রভা (শরীর থেকে নিগত তেজরাশী), তুমি শান্তি, তুমি আদি-অন্ত রহিতা, তুমি ত্রিলোকের সকলের আদি জননী, তুমি মোহনকারিনী মোহিনী তথা শোষণকারিনী শোষিণী (আকর্ষণ), তুমি ঋষিগণের সহিত দেববৃন্দ দ্বারা সবিতা, তুমি সর্বদেব দ্বারা নমস্কৃত, তুমিই কালী, তুমিই দেবী কাত্যায়নী, তুমিই ভয়দায়িনী তথা ভয়নাশিনী; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
তুমি কালরাত্রি, তুমি নিজের ইচ্ছানুসারে গমনকারিণী, তুমি ত্রিনেত্রা (সূর্যচন্দ্রাগ্নিলোচনী), তুমি ব্রহ্মচারিণী, তুমি আকাশে বিদ্যুৎস্বরূপা, তুমি মেঘের ন্যায় গর্জনকারিণী, তুমি বেতালী তথা বিশালমুখ বিশিষ্টা; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি যুথের (পক্ষীর দল) প্রধান, মহাসৌভাগ্যশালিনী, তুমি শকুনি, তুমি রেবতী, তুমি তিথির মধ্যে পঞ্চমী, ষষ্ঠী, পূর্ণমাসী ও চতুর্দশী, হে দেবী তোমায় প্রণাম।
তুমি ২৭টি নক্ষত্র, তুমি নদীস্বরূপা, তুমি দশোদিশাস্বরূপা, তুমি নগর, উপবন, উদ্যান ও অট্টালিকায় নিবাসকারিণী; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমিই হ্রীং, তুমিই শ্রীং, তুমিই গঙ্গা, তুমিই গন্ধর্বা (রাধারাণী), তুমিই যোগিনী, তুমিই যোগদায়িনী, তুমিই কীর্তি, তুমিই আশা, তুমিই দিশা, তুমিই স্পর্শ, তুমিই সরস্বতী; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি বেদের মাতা, তুমি ভক্তবৎসলা সাবিত্রী, তুমি তপস্বিনী, তুমি শান্তিকরী, সনাতনী ও একনংশা (হরির বোন); হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি কুটিরবাসিনী, তুমি বারুণী, তুমি অত্যন্ত কোপবতী, তুমি ইলা (পৃথিবী), মলয় নামক পর্বতে তোমার বাস, তুমিই সর্বভূতকে (সমস্ত প্রাণী) ধারণ করো বা তুমি সমস্তভূতের পালনকারিণী, তুমি ভয়করী, তুমি কূষ্মাণ্ডী ও কুসুমপ্রিয়া; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তোমার স্বভাব দারুণ তাই তুমি দারুণী, তুমি মদিরাতে অবস্থান করো, আবার তুমিই বিন্ধ্যগিরি এবং কৈলাসেও বাস করো, তুমিই শ্রেষ্ঠ অঙ্গনা (সুন্দরী রমণী), সিংহই (বিষ্ণুস্বরূপ) তোমার রথ (বাহন)(সিংহবাহিনী), তুমি বহুরূপ ধারণ করে থাকো , তোমার ধ্বজায় বৃষ অঙ্কিত; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি দুর্লভা, তুমি দুর্জয়া (অজেয়), তুমি দুর্গা (দুর্গাসুরমর্দিনী ও দুর্গতির হনন কারিণী) তুমিই নিশুম্ভকে ভয় দেখিয়েছো, তুমি সুরপ্রিয়া (দেবগনের প্রিয়), তুমি সুরস্বরূপা (দেবগণ), তুমিই আবার বজ্রপাণী ইন্দ্রের অনুজ রূপে রয়েছো এবং তুমি শিবা (কল্যাণস্বরূপা ও শিবপত্নী); হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি কিরাতবেশ ধারণ করায় কিরাতী, তুমি চির-বস্ত্র ধারণকারিণী, তুমি চোরসেনা দ্বারা নমস্কৃত, তুমি ঘৃত পানকারিণী (স্বাহা ), আবার তুমিই সোমরসপায়িনী, তুমি সৌম্যা (শান্ত ও সুন্দর) এবং সমস্ত পর্বত তোমার নিবাসস্থান; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
দেবী তুমি নিশুম্ভ-শুম্ভ ভাতৃদ্বয়ের মথনকারিণী, তোমার স্তন গজকুম্ভের (হাতির মাথার দু’দিকের চওড়া অংশ) মতন, তুমি কার্তিকের জননী, সিদ্ধ ও চারণ (স্তূতিপাঠক) তোমার সেবা করে, তুমি কুমারীপ্রভায় (নিজ জ্যোতিতে দীপ্তিমান্‌) সর্বত্র বিচরণ করে থাকো এবং তুমি হিমগিরি (পার্বতরাজ হিমালয়) তনয়া পার্বতী; হে দেবী তোমায় প্রণাম।
“৫০টি দেবকন্যা যারা দেবপত্নী” তাদের মধ্যে, “কদ্রুর সহস্র পুত্র- তাদের পুত্র ও পৌত্রের যে স্ত্রীরা আছেন ” তাদের মধ্যে, মাতা-পিতার মধ্যে, স্বর্গের দেবতা এবং অপ্সরা সহিত ঋষিপত্নীর মধ্যে, যক্ষদের এবং গন্ধর্বদের স্ত্রীদের মধ্যে, বিদ্যাধরীদের স্ত্রীদের মধ্যে এবং সতী-সাধ্বী মানবী স্ত্রীদের মধ্যে; হে জগন্মাতা তোমার বাস কারণ তুমি সমস্ত প্রাণীর আশ্রয়স্থল (নারায়ণী)। দেবী ত্রিলোকে নিবাসকারী সকলেই তোমার চরণে নতমস্তকে প্রণাম করে থাকে, কিন্নরগণ গান করে তোমার সেবা করে।
দেবী তুমি অচিন্ত্য (চিন্তার উর্ধে বিরাজিত) এবং অপ্রমেয় (অজ্ঞেয়), হে দেবী তোমায় প্রণাম। তুমি গৌতমী, তুমি পূর্বোক্ত নামে এবং এর বাইরে অন্যান্য নামেও তুমি কীর্তিত।
দেবী তোমার প্রসাদে আমি যেন বাধা বিঘ্ন ছাড়াই শীঘ্র বন্ধনমুক্ত হয়ে যাই, হে বিশালাক্ষী তুমি আমার ওপরে নিজের কৃপা দৃষ্টি নিক্ষেপ করো, আমি তোমার পাদপদ্মের শরণ গ্রহণ করলাম। দেবী এই ক্ষনে তুমিই আমাকে বন্ধন থেকে মুক্ত করার একমাত্র উপযুক্ত পাত্রী, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, অশ্বিনীকুমার, বিশ্বদেব, বসু, সাধ্যগণ, মুরুদগণ, পর্জন্য, ধাতা, ভূমি, দশদিক, গোমাতা, নক্ষত্রসমূহ, গ্রহ, নদী, সরোবর, সরিতা, সমুদ্র, নানান বিদ্যাধর, নাগ, গরুর, গন্ধর্ব, অপ্সরাসমূহ – এই সবারই কীর্তন করা হয়ে যায় সম্পূর্ণ জগৎ সমেত দেবীর নামের বারংবার কীর্তন করলে (দেবী জগন্ময়ী মানে সবকিছুতেই তারই বাস)।
যে ব্যক্তি দেবীর এই পুণ্যময় স্তব পাঠ করে একাগ্রমনে, তাকে দেবী সপ্তম (সাত) মাসে উত্তম বর প্রদান করে।
দেবী অষ্টাদশভূজা এবং দিব্য আভরণে বিভূষিতা, হারের দ্বারা তার সারা অঙ্গ সুশোভিত, দেবী উজ্জ্বল মুকুট এবং উজ্জ্বল ভূষণ (পোশাক) ধারণ করেছেন। হে দেবী কাত্যায়নী ! যখন তোমার স্তুতি করা হয়, তখন তুমি উত্তম বর প্রদান করো। তাই হে দেবী বরদা ! হে বামলোচনা ! আমি তোমার স্তুতি করছি। হে মহাদেবী তোমায় প্রণাম, তুমি সদাই আমার উপর প্রসন্ন থাকো এবং আমায় আয়ু, পুষ্টি, ক্ষমা ও ধৈর্য বর হিসাবে প্রদান করো। হে দেবী ! আমি বন্ধনে আটকে পড়েছি, কিন্তু আমার এর থেকে মুক্তির অভিলাষ সত্যি হোক (তোমার কৃপায়)।

[ অনিরুদ্ধর এই প্রকার স্তুতিতে প্রসন্না হয়ে মহাদেবী দুর্গা কারাগারে বদ্ধ কৃষ্ণ পৌত্রকে (অনিরুদ্ধ) সাক্ষাৎ দর্শন প্রদান করলেন। তারপর শরণাগতবৎসলা দেবী দুর্গা অনিরুদ্ধের (যুদ্ধে কেউই যার গতিরোধ করতে পারে না) হিতার্থে তাকে সেই নাগপাশ বন্ধন থেকে মুক্ত করে দিলো। দেবী তাকে নানান বাক্যে সান্তনা প্রদান করলে পর, অনিরুদ্ধ দেবীর পূজা করলো। অতঃপর দেবী তাকে বললো অনিরুদ্ধ ! চক্রধারী শ্রীকৃষ্ণ (অনিরুদ্ধের পিতামহ) তোমাকে পুরোপুরি বন্ধন মুক্ত করবে, তাই ততদিন পর্যন্ত কিছুকাল এই কষ্ট তুমি সহ্য কারো। সেই দৈত্যসুদন (শ্রীকৃষ্ণ) বাণাসুরের ১০০০ বাহু ছিন্ন করে তোমায় তার পুরিতে (দ্বারকা) নিয়ে যাবে। দেবীর এই প্রবোধবাক্যে (আশ্বাস) প্রসন্ন হয়ে অনিরুদ্ধ পুনর্বার দেবীর স্তুতি করলো।]

কৃষ্ণ পৌত্র অনিরুদ্ধ বললো, হে দেবী বরপ্রদায়িনী শিবে ! তোমায় প্রণাম, হে দেবী সুরারিনাশিনী ! (দেবশত্রূহন্ত্রী ), তোমায় প্রণাম, হে কামচরে (ইচ্ছানুসারে বিচরণকারিণী) সদাশিবে !, তোমায় প্রণাম, হে সর্বহিতৈষিণী (যিনি সবার শুভাকাঙ্খী) ! সবার প্রিয়, তোমায় প্রণাম, তুমি সদা শত্রূদের ভয়প্রদান করে থাকো, তোমায় প্রণাম, হে বন্ধনমোক্ষকারীণি (যে বন্ধন থেকে মুক্ত করে) ! তোমাকে প্রণাম, দেবী তুমি ব্রহ্মাণী ! তুমি ইন্দ্রাণী ! তুমি রুদ্রাণী ! তুমি ভূত, বর্তমান ও ভবিষৎস্বরূপা শিবা ! অতয়েব তুমি সর্বপ্রকারের ভয় থেকে আমার রক্ষা করো, হে নারায়ণী (নরের আশ্রয়স্থল) তোমায় প্রণাম, হে জগন্নাথে (জগতের ঈশ্বরী) !, হে প্রিয়ে ! হে দান্তে (সংযত) ! হে মহাব্রতে (সম্ভবতঃ জগৎকল্যাণের মহাব্রত ধারণ করেছে) !, তোমায় প্রণাম, হে ভক্তিপ্রিয়ে জগন্মাতা !, হে শৈলপুত্রী (পর্বতরাজ হিমলয়নন্দিনী), হে বসুন্ধরে (পৃথিবী) !, তোমায় প্রণাম, হে বিশালাক্ষী (বিরাট চক্ষু বিশিষ্টা) নারায়ণী ! তুমি আমায় রক্ষা করো, তোমায় প্রণাম, হে দানবদের প্রতি ভয়ঙ্করী, সমস্ত প্রকার দুঃখের থেকে আমায় পরিত্রান করো, হে রুদ্রপ্রিয় (শিবের প্রিয়) মহাভাগা ! তুমি ভক্তের আর্তি (পীড়া, দুঃখ,যন্ত্রণা) নাশকারিণী, আমি তোমার চরণে মাথা ঝুকিয়ে তোমায় প্রণাম করছি। আমি বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম কিন্তু সেই অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও তুমি আমায় সেই বন্ধন থেকে মুক্ত করেছো।

ঋষি বৈশম্পায়ন বললো, যে ব্যক্তি আর্যাদেবীর এই পুণ্যময় স্তব পাঠ করে একাগ্রমনে, সে সমস্ত পাপ থেকে নিষ্কৃতি (মুক্তি) পেয়ে বৈকুন্ঠে (মৃত্যুর পর) যায়, আর যদি সেই পাঠকারী ব্যক্তি বন্ধনে আবদ্ধ থেকে থাকে তাহলে সে নিশ্চয় সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হয়, যেটি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের (পুরাণ প্রণেতা তথা ভগবান বিষ্ণুর ২৪টি অবতারের অন্যতম) সম্মত (অনুমোদিত)। ॥ শ্রীআর্যাদুর্গার্পণমস্তু ॥

বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার: বাংলাদেশ নিবাসী রবীন সাহা
©️ দুর্গালোকনিবাসিনী শ্রীমদদুর্গতিনাশিনী
©️ শ্রীদুর্গাচরণ অনুরাগী শিলাজিৎ রায়

Leave a Reply

%d bloggers like this: