Biswajit Pan
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ফ্যালা লিলিপ রাস্তা টার দিকে, বাটি থেকে ৫০০ পা দূরে হবে লিলিপ রাস্তা টা, কখন একটা মোটর গাড়ি নজরে পড়বে, আর ও মাঠের মধ্যে সিঁথি কেটে গিড়গিড় করে ছুটে চলে যাবে মোটর গাড়ি টার কাচে! মোটর গাড়ি দেকা আলেকালের দোয়ায়। নিমে কা বলেচিল কে যেন আজ আইবে গাঁয়ে, মোটর গাড়িতে করে। লিলিপের প্রতি ও লোলুপ তাই।
ফ্যালার ঠাগমা কলকেতার মেয়ে, বের পর গাঁয়ে গিয়েই সব চুল পাকিয়েচে। বিরাট দাপুট। গাঁয়ের সোব্বাই ভয় পায়। কেলের ঠাগমার সনে আদাইকাঁচকলাইয়ের সম্পক্ক। এমন ঠেস মেরে কোথা বলবে, হাড়মজ্জা জ্বলে যাবে! কেলের ঠাগমাও কম নয়!
ঠাগমা চান কত্তে যাচ্চে লতুন পুকুরে। চান কয়ে ফিচ্ছে কেলের ঠাগমা। ফ্যালার ঠাগমা কে দেকে বলল “কিরে সেমিজ পরে চান কত্তে যাচ্চুস?”
ফ্যালার ঠাগমা বলল “কি করব বল ভাই, আজকাল ত ইরকমই চল হইচে?”
কেলের ঠাগমা চিমটি কেটে দিল “আগে ত দুখানা গামছা জড়িয়ে চান কত্তে যেতিস!”
ফ্যালার ঠাগমার ছাড়ার কোথাও নয়, ছাড়েওনি, বলল “আর তুই যে একখানা গামছা জড়িয়ে চান কত্তে যেতিস হারামজাদি!”
ফ্যালা আর কেলে দুইবুড়ির এই কবির লুড়াই দেকে বেদম মজা লুটতে লাগল!
কেলের ঠাগমার গোটা গুষ্টি উদ্ধার কত্তে কত্তে ঠাগমা বাকুলের দিকে হাঁটা দিল। পথে ধনার মা জিগালো “কি চান করে ফিল্লে?”
ঠাগমা উত্তর দিল “না, ভিজে কাপড় জড়িয়ে সোহাগ করে ফিচ্চি! ঢেম্নামাগি!’
১০ টা বেয়ে গেল, মুড়ি খাবার টান দিচ্চে পেটে। ফ্যালা বাকুলে ঢুকল। দেখল ছোট কাকি মুড়ি ভাজচে। ছোট কাকির বোনঝি হেগোরোগে মারা গেচে কদিন আগে। ছোট কাকি সারাদিন এর ওর সনে দাঁত কেলিয়ে বেরায় কিন্তু কেন জানি না মুড়ি ভাজার সময়ই “ও শান্তি তুই কোতায় গেলি রে! ও শান্তি তুই কোথায় গেলি রে!” বলে গাঁসুদ্ধু লোক কে অতিষ্ঠ করে কাঁদতে থাকে!
ফ্যালা বেপার টা কিছুতেই ধোত্তে পারে না!
ঠাগমা ছোট কাকি কে দুচক্ষে দেকতে পারে না! চিৎকার শুনে বাইরে থেকেই গজগজ কত্তে লাগল “এই বাপভাতারির আবার ঢং শুরু হল!” বাকুলে ছাগল ঢুকেচে। পাশের বাড়ির টিপাইয়ের ছেলে ছাগল আনতে এসে দালানে রাখা এক বাটি ডাল মাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল! ছোটকাকি ওই রিদমেই খেঁকিয়ে উঠল “উরে ওলাওঠো রে, ডাল টা ছেনাহাগার মত মাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল রে! এক্কুনি বুড়ি মাগী এইসে গালে আমায় ছিঁড়ে খাবে রে!”
এদিকে ছোট কাকির মোড়াকান্না আর ওদিকে দুই বাটি দূর বাকুল থেকে সাগরের চিৎকার!
সাগরের ছেলে টা টাউনে পড়ে। অনেক কষ্টে সাগরে ছেলে টাকে টাউনে পোড়ায়। দিনে মাঠে কাই করে, আবার সাঁঝে লখা মাঝির ঘরে মাঝি পাড়ার ছেলেমেয়েদের পোড়াই, কিছু পোয়সা জুটে। ক্ষুদে মাস্টারের কাছে ছেলের ছবি কাগজে বেরিয়েচে শুনে সাগরের খাল খিঁচে গেল! ছেলে কে পুলিশে ধরে নিয়ে গেচে! পরে ছাড়াও পেয়েচে! ছেলে বাটি আসতেই সাগরে বলে “বুনমানুষের মত চেয়ারা বানিয়ে উই বড় লুকের বেটা গুলোর সনে তুই কি কচ্চিলি? মিয়া মানুষ গুলার কি ডেস?”
ছেলে উত্তর দেয় “ওগুলো তুমি বুঝবে না, ওগুলো হল বিপ্লব, সমাজ পরিবর্তনের জন্য হার না মানা লড়াই!”
সাগরে কয় “লিখাপুড়া ছেইড়ে তুকে উই পন্দমড়লি কে কোইত্তে বলেচে?”
সাগরের ছেলে কেতো কার সাথে কদিন আগেও ফ্যালা হাগতে যেত, কুড়েমাঠের জলায় ঘুনী ফেলে মাই ধত্তে যেত, আজ সেই কেতো কা ফ্যালা কে দেগলে চিনতে পারে না, কোথাবাত্তায় আমুল পরিবর্তন, গাঁয়ের ভাষা বুলতে উর লোজ্জা হয়!
ফ্যালা গাঁয়ের হাইস্কুলে পড়ে, কেতো কার থেকে পাঁই কেলাস নিচে। সোকালে ভবার পাড়ে গুরুপ লিয়ে হেগে, মাঠে চলে যায়। মুনিস দের সাথে গায়ে গতরে খাটে। ঘরে ফিরেই একথালা আলুসিদ্দ মাখা মুড়ি খেয়েই হাইস্কুলের দিকে ছুট! ১১ টায় পুঁছাতে হোবেই!
সূর্যমুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গীতিকে দেকে কেমন কেমন হত! ফ্যালা ভ্যাবলার সাথে গীতিকে দেকে গাইত
“কূলের বীচি, ফুলকো লুচি, বোঁদে দিয়ে খাব,
বোঁদে খুঁইতে বাটি লিয়ে ছাগলের পোঁদে যাব”
ইপিস্কুল থিকে একটা বাঁক পেরিয়ে হাইস্কুল টাই যেতে হয়। এই বাঁক টার নামই ‘সূর্যমুড়া বাঁক।’ এই বাঁকেই অনেক অনেকের জীবন বাঁক নিয়েছে। কোনও টা নদী, সমুদ্র পেরিয়ে সাগরও পার করেচে, কোন টা গাঁয়ের খাল-বিলের টানে ওখানেই আটকে গেচে। কিন্তু হাজার ঝড়, জল, দুর্যোগেও বাঁক টাকে সোজা কত্তে পারেনি। একইরকম বাঁকে রয়েচে।
সূর্যমুড়া উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে ফ্যালার একটা লাভ হইচে, অনেক গীতি দেকতে পায়। ছেনাবেলার ছটফটানি টা রয়ে গেলেও ফ্যালা বুইতে পারে হাইস্কুল টায় ঠিক ইপিস্কুলের মতো টান নাই, ইকটু উন্যরকম টানও আছে! ঠান্ডায় জমে থাকা শৈশব প্রকৃতির সাথে প্রাকৃতিক রীতিতেই কৈশরের হাতছানি তে ফাগুনের তপ্ত নয় স্নিগ্ধ আঁচে কূলের ঋতু থেকে কৎবেলের ঋতু তে প্রবেশ করচে।
Leave a Reply