Kaji Najrul Islam, Nabadwip and Religious Harmony

Kaustav Ghosh

নবদ্বীপ ধাম(Nabadwip dham) মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের জন্মস্থান। এই নবদ্বীপ সেই সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড(Oxford of the East) হিসাবে পরিচিত ছিল তার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জন্য। এই নবদ্বীপ ধামেই মহাপ্রভুর হাত ধরে জন্ম হয়েছিল গৌড়ীয় বৈষ্ণব পন্থার। তাই এই নবদ্বীপ ধামেই মহাপ্রভু, তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া, প্রিয় পার্ষদ নিতাই এবং অন্য সব পার্ষদদের স্মৃতি চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তিনি ভারতের ভক্তি আণ্দোলন এর অন্যতম পুরোধা ও অন্যতম সমাজ সংস্কারক। তাঁকে তার ভক্ত ও অনুগামীরা শ্রী কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করেন। তাঁর তৈরী করা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবে রাধাকৃষ্ণের বহু মন্দির এই পবিত্র ধামের আসে পাশে দেখতে পাওয়া যায়।

এই নবদ্বীপ ছিল সেন বংশের অধীন বৃহৎ সেই বাংলা তথা ভারত এর রাজধানী। 1203 সালে বখতিয়ার খিলজি নবদ্বীপ আক্রমণ তথা দখল করলে বাংলার বুকে মুসলমান শাসন শুরু হয়। এই ঘটনার 283 বছর পরে মহাপ্রভুর জন্ম হয় ও তিনি কৃষ্ণপ্রেমের প্লাবনে গোটা বাংলা কে ভাসিয়ে দিয়ে যান।

নবদ্বীপ আমার কাছে সর্ব ধর্ম সমন্বয় এর অন্যতম প্রাচীন রাজধানী। এই বৈষ্ণব ক্ষেত্র নবদ্বীপে শাক্ত ক্ষেত্র পোড়ামাতলা দেখা যায় যেখানে পোড়ামা একটি ঘটে বিরাজ করেন মা ভবতারিণী ও বাবা ভবতারনের সাথে। এই নবদ্বীপ এই বিরাজ করেন বুড়ো শিব ও মা মঙ্গল চন্ডী । এই নবদ্বীপ ধাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন চাঁদ কাজি ও হরিদাস ঠাকুর কে যারা মুসলিম ছিলেন।

নবদ্বীপ ধামে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সাথে যবন হরিদাস ও চাঁদ কাজি ও পূজ্য। রাধা মদনমোহন মন্দির সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে ১৯৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দে কাজী নজরুল ইসলাম গানের আসরে গেয়েছেন স্বরচিত ‘দুর্গমগিরি কান্তর মরু দুস্তর পারাবার’। এখানে নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত মেহগনি কাঠের চেয়ার সযত্নে রক্ষিত আছে।
একটু দূরে নাটমন্দিরের নকশাদার মেঝে যেখানে মিশেছে জগমোহনে, সেইখানে রয়েছে ছবিটা। নাটমন্দিরের সাদা উত্তরীয় দিয়ে ঢাকা চেয়ারে ফুলের মালা, ধূপ, চন্দনে সাজানো কাজী নজরুল ইসলাম। রাধা মদনমোহন প্রণাম করতে গেলেই চোখ পড়বে কবির দিকে।
নদিয়ার সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ ছিল। ১৯২৬ থেকে ১৯২৮ কৃষ্ণনগরে কাটান কবি। তার পরেও যোগাযোগ একেবারে ছিন্ন হয়নি। তিনের দশকে তিনি যখন মাঝেমধ্যেই নবদ্বীপে আসতেন, তখন ১৯৩৭ সালে তাঁর লেখা একটি বিখ্যাত ভক্তিগীতি রেকর্ড হয়েছিল— “বর্ণচোরা ঠাকুর এলো রসের নদিয়ায়, তোরা দেখবি যদি আয়।”
প্রাণগোপাল গোস্বামীর বালবিধবা বউদি রাধারানি দেবী, যিনি বড়মা নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি নিজে হাতে নজরুলকে খাওয়াতেন।

যে কথা গুলো এখানে লিখলাম সেটা ছিল ইতিহাস ও তথ্যসূত্রের উপর নির্ভর করে, কিন্তু যখন নিজে গত 27 মাসে দুই বার এই পবিত্র ধাম দর্শন করলাম এই জিনিসটাই শুধু উপলব্ধি করেছি। ভারত শুধু বলে দেখাই নি, করেও দেখিয়েছে যে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন ধর্ম ও তাদের ভিন্ন মত একসাথে শুধু থাকতেই নয় একসাথে প্রগতি তথা পরম সত্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও করতে পারে। এটাই আমার ভারত, অমর ভারত। আমার ভারত এর আত্মা গোটা পৃথিবীকে শিখিয়েছে-

“Whole world is one family”

———-‐———————

তথ্যসূত্র-আনন্দবাজার 3/3/2021
https://www.anandabazar.com/west-bengal/nadia-murshidabad/madan-mohan-temple-in-nabadwip-paid-tribute-to-kazi-nazrul-islam-on-his-birthday-1.1154328

Leave a Reply

%d bloggers like this: